বিশ্ব জুড়ে বাংলা সাহিত্যের সম্ভার

বিশ্ব জুড়ে বাংলা সাহিত্যের সম্ভার

শ্রাবণের বৃষ্টি মাতাল দুপুর / শাহনাজ পারভীন



শ্রাবণের বৃষ্টি মাতাল দুপুরে আমার মন খারাপ হয়।
মন খারাপ হয় জ্যামে বসে জলজটে আটকে ফেসবুকের নানান রকম পোষ্টে
জর্ডান থেকে ফিরে আসা শিশু আয়েশা মায়ের কোল ছাড়া হয়ে যখন
ফ্যাল ফ্যাল তাকিয়ে থাকে হঠাৎ কোলে দেয়া পাশের সিটের আন্টির মুখে
মা লাগেজ ছাড়ার নাম করে পালিয়ে গেছে এয়ারপোর্ট ছেড়ে
বাবাকে দেখেনি জন্মাবোধি। মায়ের অযত্নে বেড়ে উঠেছিল ভিনদেশে।
এ দেশে পা দিতেই মা বিহীন আয়েশার অবহেলিত কচি মুখ আমার চোখে অশ্রু আনে।
শ্রাবণের ঝুম বৃষ্টি আমার মনকে প্রশান্তি দিতে পারে না।
শ্রাবনের বৃষ্টি আমাকে প্রশান্তি দেয় না ।
যখন পাঁচ বছরের শিশু দাদা কর্তৃক ধর্ষিত হয়ে হাসপাতালের বেডে
মৃত্যূর সাথে পাঞ্জা লড়ার দৃশ্যে আমার চোখ আটকে যায়।
যখন চোখের সাথে মেখে যায় সে কাহিনী- বাবা কর্তৃক ধর্ষিত
পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা কিশোরীর ভয়ার্ত চোখ।
যখন নায়ক সালমানের খুন হওয়ার বাইশ বছর পর সে খবর ভাইরাল হয় ফেসবুকে-
তখন শ্রাবণের ঝুম বৃষ্টি আমাকে স্বস্তি দেয় না।
যখন বেসরকারী শিক্ষকগণ নানান অধিকারে অঝোর বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে
প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনের দৃঢ় হাত পরষ্পর পরষ্পরের হাতকে আকড়ে ধরে
চোখের তারায় জ্বলে ওঠে হাজার তারার ঝিলিক
তখন আমার মন খারাপ হয়। আমিও নিঃশব্দে তার পাশে যাই।
আমার মন ভালো নেই, তাই রাঁধা হয় নি ভুনা খিচুড়ি।
ভাজা হয় নি ইলিশ আর বেগুন
ভর্তা মাাখাইনি শুকনা ঝাল পেয়াজ আর সরিষার তেল
ডাকা হয় নি তোমাকে।
অফিসের ব্যস্ততায় তোমার টিফিন বাটির সাদা ভাত পাবদা মাছের ঝোল
বেমালুম বৃষ্টির গন্ধে মন খারাপ করে।
অথচ আমি জানালার শার্সিতে দাঁড়িয়ে নীল অপরাজিতার পাপড়িতে ভিজতে থাকি অহর্নিশি।
আমি হিপোক্রাট। আমি পরাজিত। এই শ্রাবণে আমি অযোগ্য কবি এক...
আমি হত্যা রোধ করতে পারি না
আমি ধর্ষণ রোধ করতে পারি না
আমি শিশুর ঠোঁটে তারার ফুল ফোটাতে পারি না
ন্যায্য অধিকার আদায়ে আমি ব্যর্থ...
আমি অফিসগামী স্বামীর বাটিতে ভুনা খিচুড়ি আর ভাাজা ইলিশের হাসি দিতে পারি না
তাই ভ্যাপসা গরমে তুমুল শ্রাবণের বৃষ্টিতে ভিজবার অধিকার আমি হারিয়েছি।
আমি পরাজিত। আমি হেরে যাওয়া অযোগ্য কবি এক...
বৃষ্টি দোহাই তোমার! তোমার শুদ্ধ জলে আমাকে ভিজতে দিওনা।
মাতাল বৃষ্টি দুপুর!

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.