POTHIK-35 ISSUE
POTHIK-35 ISSUE
(১৬/০৭/২০২০ ভার্চুয়াল
পথিক সাহিত্য আড্ডা-১ এ পঠিত কবিতার একাংশ)
বৃষ্টি সেলাই করি
শাহনাজ
পারভীন
যখন
এ বাড়িতে প্রথম এসেছিলাম
তখন তার
ছাউনিটা ছিল এক কাব্যিক ছুতোরের তৈরি
বৃষ্টির শব্দে
গরম ভাতে ঘুম ভর্তা খেতে খেতে চোখ লেগে যেতো
তখন দখিনা
জানালায় দুলতো ঝুমকো জবা
পুব জানালার
বারান্দায় ঝুলতো ভেজা সালোয়ার
জ্যোৎস্নার
প্লাবনে ভেসে যেতো উঠোনের গল্প ফুল
পশ্চিমে কোন
জানালা ছিলো না,
ছিলো না পাখির
কলকাকলী, প্রশান্ত বাতাস আর
শুভ বিকেলের
স্বপ্ন মাখা সান্ধ্যকালীন পশ্চিমারাগ।
পাড়ার
এলিট মুরব্বিরা বলতেন
এ গুদোমে থাকো
কী করে?
আর বিড়বিড় করে
বলতো 'বানরের গলায় মুক্তোর মালা!'
আমি শুনে
ফেলতাম আমার পঞ্চ ইন্দ্রীয় দিয়ে
তাই আর প্রথম
প্রশ্নের উত্তরের দায় থাকতো না আমার।
একসময়
বেড়ি কেটে বেরিয়ে এলাম সামনের লিচু বাগানের স্বপ্নময় অলিন্দে
সে দু দশক আগের
কথা
আমি ঘরের
চারপাশ সাজালাম জানালার সৌন্দর্যে
দেওয়াল থাকলো
না কোন
বাতাসের, আলোর, মেঘের, কল্লোলের
যুদ্ধ আর প্রেম, আনন্দের ঝাড়বাতি
হুড়োহুড়ি
করে, মানিপ্লান্ট আর লজ্জা লতার সাথে দিন রাত
সুখ স্বপ্নের
সুই সুতো আমার হাতে
ইচ্ছে মাফিক
রিপু করি, সেলাই করি দুঃখ সুখের পদাবলী!
দেওয়াল
বিহীন সে ঘরে স্বপ্ন সাজাই থরে থরে
দুঃখ গুলো আটকে
রাখি সিন্দুকে
আর ইচ্ছের
জানালা খুলে রাখি পশ্চিমের
উত্তর দক্ষিনে
আমার খোলা আকাশ
তার সব আলো
হাওয়া ঢুকে পড়ে যখন তখন
তাদের হট্টগোলে
আমার ঘুমিয়ে থাকা সুখগুলো জেগে ওঠে
আজ
তিন দশক পর
আমার উত্তরের
জানালায় ঝুলে আছে হাইরাইজড বিল্ডিং
তার প্রতিটি
দেওয়ালে ঝুলছে উদ্দেশ্যহীন শব্দের চরিত্র,
মুহূর্মুহু
আলোকবার্তা, ডিজে ড্যান্সের ফাঁদে রাত্রির আল্পনা।
দক্ষিণের
জানালায় মিশে আছে পাঁচ তারকা ভবন, সেখান
থেকে অনবরত
ভেসে
আসছে টুংটাং বরফের জগত,
অলৌকিক আলোর
কুচি, দিবাস্বপ্নের কালোতীর্ণ উপন্যাসের
ফাঁদ।
আমি
যতই নান রুটির সাথে ঘুম ভর্তাকে ডাকি
ওরা আমায়
নির্ঘুম কফির পেয়ালা হাতে ধরায়
আমি মাঝরাতে
জেগে জেগে বৃষ্টি সেলাই করি রংহীন ব্লাক কফির কাপে!
বিপদ
রমজান মাহমুদ
পালিয়ে গিয়ে একটা বনে
বিচ্ছু-জোঁকের আক্রমণে
লোকটা ওঠে চেঁচিয়ে।
মাটি ছেড়ে উঠলো গাছে
দেখলো বিরাট সর্প আছে
গাছের ডালটা পেঁচিয়ে।
সব কিছু স্বাভাবিক আছে
চঞ্চল কবীর
সব কিছু স্বাভাবিক আছে!
থেমে নেই গোপন রতি
থেমে নেই পাখির কলরব
থেমে নেই টিকটিকির হাক-
ডাক থেমে নেই অফিস , কোট কাচারী
অথচ থেমে গেছি আমি , তুমি , আমরা !
আসলে কি থেমে গেছি?
সকাল হলে কাজে যায়
রাত হলে ঘুমাতে যায়
অসুখ হলে ডাক্তার দেখায়
ক্ষুধা লাগলে খেতে যায়
প্রয়োজনে সঙ্গীর কাছে যায়
কিছুই থেমে নেই ; সব স্বাভাবিক
অথচ দেখি ট্রেনের অপেক্ষায়
যাত্রী স্টেশনে অপেক্ষমান
কোন ট্রেনে যাব , কোন পথে যাব
তারা ভাবছে, অথচ কদিন
আগে সব স্বাভাবিক ছিল!
পাখি ডাকলে আজ মনে সংশয়
ফুল ফুটলে মনে জাগে ভয়
সবখানে সবাই নিরুপায়
অথচ সব কিছু স্বাভাবিক আছে!
ভাই ভাই এ বিভেদ আছে
সরকার নিয়ে বিতর্ক আছে
ঘুষ লেনদেন আছে
মিথ্যার জয় আছে
সত্যের পরাজয় আছে
তবুও কোন কিছু থেমে নেই
সব কিছু স্বাভাবিক আছে!
শুধু থেমে গেছে জীবন
থেমে গেছে আনন্দ
থেমে গেছে জানাযা
অথচ থেমে নেই কবর
থেমে গেছি আমি , তুমি, আমরা
অথচ সব কিছু স্বাভাবিক |
ভাইরাস
জাহান
আরা খান (কোহিনূর)
হে
মানুষ তোমার কিসের এত অহংকার?
তুমি তো
পারছোনা তোমার রক্ত চক্ষু,
তোমার ধন সম্পদ,তোমার ক্ষমতা বলে
লক্ষ মৃত্যুর
মিছিল ঠেকাতে।
এক
অজানা অচেনা ভাইরাস
গোটা পৃথিবীর
বুকে তান্ডব চালাচ্ছে,
কই তুমি তো
পারছোনা,
তার মাথায়
বন্দুকের নল ঠেকিয়ে
পিছু হটাতে,
আজ
তুমি ঘর বন্দী,
পারছোনা
কলকারখানা
যানবাহনের কালো
বিষাক্ত ধোঁয়ায়
পৃথিবীর বাতাসে
বিষ ছড়াতে?
তোমার ক্ষমতা
বলে প্রকৃতিকে
দুমড়ে মুচড়ে
পদদলিত করতে,
এক
নিমিষেই থেমে গিয়েছে
মন্দির মসজিদের
ঝগড়া,
থেমে গিয়েছে
আইন সভায়
বিচারের নামে
প্রহসন
আইরান গয়রানের
খেল
থেমে গিয়েছে
চীন আমেরিকার
বানিজ্য যুদ্ধ,
পৃথিবীর
মানুষ মেতে উঠেছিল
এক ভয়ংকর বিভৎস
খেলায়,
ধরালো অস্ত্র
চাপাতি, নিয়ে
বুক ফুলিয়ে এক
ভয়ানক পরিস্থিতি
সৃষ্টি করা,চুরি,ডাকাতি,ছিনতাই
খুন ধর্ষন
রাহাজানি ছিল
নিত্য নৈমিত্তিক
ব্যাপার
ভার্সিটির
ক্যাম্পাসে
কোনো নিরীহ
ছেলেকে
পিটিয়ে মারতে
ওদের
বিবেক জাগ্রত
হয়নি,
ওদের হৃদয়
ব্যাথিত হয়নি
ওদের হাত
কাঁপেনি
কারো সাধ্য
হয়নি ওদের রোধ করা
চারিদিকে শুধু
হাহাকার ব্যাভিচার
চারিদিকে শুধু
রক্তপাত,
নিরীহ
বাবা মা তাদের সন্তান
হারানোর বেদনা
সন্তানের খুনের
বোঝা বইতে বইতে
ক্ষত বিক্ষত
হৃদয় রক্তাক্ত হয়েছে
তাদের হাহাকারে
পৃথিবীর
বাতাস হয়েছে
দুষিত।
চারিদিকে
ধর্ষনের ধুম
তার থেকে বাদ
যায়নি মা সমান নারী
বাদ যায়নি তিন
বছরের শিশুটিও
ছোট বড় কোনো
নারী
নিরাপদ ছিলোনা,
কোনো আপন জনের
কাছ থেকেও,
পৃথিবীটা
এক নোংরা মহামারীর
দখলে চলে
গিয়েছিলো,
বেপরোয়া মদ্যপ
গাড়ী চালকের
কারনে
সড়ক দুর্ঘটনায়
প্রতিদিন
অকালে ঝরে
গিয়েছে
হাজার মানুষের
প্রাণ
কেউ হারিয়েছে
সন্তান
কেউ হারিয়েছে
ভাইবোন
কেউ হারিয়েছে
স্বামী
আজও তারা
শোকাহত,
হদয়ের
কন্দরে বোবা
পাখীটির
ছটফটানি
বোবা কান্নায়
পৃথিবীটা
পরিনত হয়েছিলো
এক বিষাক্ত
বিষের বাতাস,
পৃথিবীটাকে
গ্রাস করেছিলো
এক নোংরা কঠিন
ভাইরাস,
এই
নোংরা ভাইরাস ঠেকাতে
তোমাদের নোংরা
গতিপথে
বাধা সৃস্টি
করতে,
পৃথিবীতে আগমন
ঘটে
করোনা নামের ঝড়,
যে ঝড়ে গোটা
পৃথিবী
আজ স্তব্ধ।
করোনা
নামের মহাবিপর্যয়ের
মুখে অচল
পৃথিবী,
মহা শক্তির
উন্নত রাষ্ট্র
গুলিতেও লাশের
পাহাড়,
আজ এই মানব
জাতি
ধ্বংস স্তুপের
উপর
অসহায়, শুধুই চলছে
জীবন রক্ষার
লড়াই,
সারা
পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে
পড়ে আছে লাশের
পরে লাশ
কারো সাধ্য নেই
এদের বিরুদ্ধে
রুখে দাঁড়াবার,
অচেনা এক
ভাইরাস
থমকে দিয়েছে
গোটা পৃথিবীটাকে,
একের
পর এক দেশ শহর
লক ডাউন,
এই লক ডাউনের
কারনে
প্রতিদিন কমছে
দুষনের মাত্রা
প্রানঘাতী
করোনার থাবায়
বিশ্বজুড়ে
মানুষ যখন আতন্কে ঘর বন্ধি
ঠিক তখনই
বিপরিত চিএ প্রকৃতিতে
মানুষকে ঘর
বন্ধি করে দিয়ে
ভাগাভাগি করে
নিয়েছে প্রানীকুল
মুক্ত পরিবেশে
লকালয়ে
ফিরছে বিরল
পাখী
কীটপতঙ্গ, তারা সজীব সতেজ
পরিবেশে
প্রাণভরে নিশ্বাস নিচ্ছে।
ভর
দুপুরে ঘরে বসে শোনা যায়
ওদের কিচির
মিচির,
ওরা নিজেদের সহ
অবস্থান
জানান দিচ্ছে।
প্রকৃতি উপভোগ
করার
অধিকার কি শুধু
মানুষেরই,
প্রকৃতি আজ
ষোলো আনা
বুঝিয়ে দিচ্ছে
নিরীহ
ডলফিনেরা ফিরছে দল বেঁধে
নির্ভয়ে, সাগরের পানিতে খেলা করছে
সজীব সতেজ
ধুলামুক্ত হয়ে উঠছে
গাছপালা,চকচকে রোদের সাথে
পরিস্কার আকাশ।
সাত রঙের
রংধনুর দেখা
মিলছে স্বচ্ছ
পরিচ্ছন্ন আকাশে
দীঘি পুকুরের
পানির রং
হয়ে উঠছে
স্বাভাবিক।
একদিন
লক ডাউন উঠে যাবে,
কোরোনাও চলে
যাবে,
আমরা যেন
নিজেদের
ফাঁদে নিজেরা আর
না পড়ি,
আমরা স্বার্থের
লড়ায়ে যেন
মেতে না উঠি,
পৃথিবীর বাতাস
যেন
দুষিত না করি
পরিবেশ
প্রকৃতির যত্ন নেই।
না হলে হয়ত কোরোনার থেকেও
ভয়ানক কোনো
ভাইরাস
এসে গ্রাস করবে
গোটা বিশ্ববাসীকে,
আমাদের এই মানব
জাতিকে।
আমি কোন দিকে যাবো?
এম.এন.এস তুর্কী
আমি উত্তরে যাবো না দক্ষিণে।
নাকি পশ্চিমে যাবো না পূর্বে।
আমি বস্তুবাদ নিবো না আধ্যাত্মিকতবাদ;
আধ্যাত্বিকতাবাদ নিবো না বস্তুবাদ।
কখনও বস্তুবাদ ছিঁড়ে-ভুড়ে খায়
আমাকে, কখনও আধ্যাত্মিকতাবাদ।
আমি দিশেহারা বিধ্বস্ত এক মানুষ।
আমি এখন কোন দিকে যাবো?
কখনও কখনও মনে হয় নিজেকে,
সবকিছু ফেলে অর্থ উপার্জনে বিসর্জন দি।
তাতে পাবো সমাজের মুহু মুহু করতালির
বিশাল সমাহার, আর না চাইতে পাবো সবকিছু।
আধ্যাত্মিকতাবাদ ডেকে বলে,এসব কিছুনা।
এসব কিছু যে মিথ্যে,মিথ্যে ছলনা মাত্র
তুমি যে অতিথি এ রঙ্গশালায়!
আমি নড়ে-চড়ে বসি আবার।
তাইতো যে জীবন ক্ষণিকের,
সেই জীবনের জন্য এতো আয়োজন কেন?
আমি মুহূর্তের মধ্যে ভুলে যাই সবকিছু ।
তারপর ;তারপর যখন ঘরে ফিরি,
তখন দেখি সেই বস্তুবাদ
আবার বসে আছে ঘরের চৌকাঠ জুড়ে।
সে আমাকে ঘরে ঢুকতে দিবে না।
পথ ছাড়ো ভাই, আমাকে যেতে দাও।
সে মুচকি হেসে বলে,
তাহলে আমাকে কোলে তুলে নাও
আর যেটাকে মাথায় তুলে এনেছো
সেটিকে ছুঁড়ে ফেলো আস্তাকুঁড়ে।
আমার বুকের ভিতর আবারও হাহাকার
করে ওঠে। আমি হই
দ্বি-খন্ডিত!
আর নিজেকে প্রশ্ন করি,
আমি এখন কোন দিকে যাবো?
বস্তুবাদ না আধ্যাত্মিকতাবাদ।
মেঘ ভূমি বীর্য
শাহরিয়ার সোহেল
পুরুষ মেঘ
নারী ভূমি
বৃষ্টি বীর্য
উড়ন্ত মেঘ ওড়ে দিগ্বিদিক
ভূমি অপেক্ষা করে মেঘের
মেঘহীন ভূমি তৃষ্ণার্ত অবিরল
মেঘের ভেতর জল ভরে গেলে
সে ছেড়ে দেয় বৃষ্টি ভূমিতে
ভূমি গর্ভবতী হয়
আদিগন্ত সবুজ শস্যে ভরে ওঠে প্রান্তর
এভাবেই পুরুষ মেঘ
নারী ভূমিকে বৃষ্টি বীর্য দান করে
পৃথিবীকে করে সুজলা-সুফলা…
কোন মন্তব্য নেই