বিশ্ব জুড়ে বাংলা সাহিত্যের সম্ভার

বিশ্ব জুড়ে বাংলা সাহিত্যের সম্ভার

POTHIK POTRIKA, 31 YEAR, 34 ISSUE, PART-1



পথিক পত্রিকা, ৩১ বর্ষ, ৩৪তম সংখ্যা, পার্ট-১
(যথাসময়ে প্রিন্ট আকারেও প্রকাশ করা হবে।)



করোনা
অসীম সাহা

মুত্যুর কাছে হার না মেনেই
আমরা জিতবো করোনায়
 বাঙালি জাতির জীবন কেটেছে
কোটি ঝড় আর ঝঞ্ঝায়

তবুও বাঙালি নয় শঙ্কিত
রুখবে করোনা, হবে না তো ভীত
এবারো তেমনি মোকাবেলা হবে...
করোনা পড়বে লজ্জায়।।

পৃথিবী যখন করোনার ঝড়ে
জীবন দিচ্ছে শুধু অকাতরে
চীন থেকে দূর ইতালিতে আজ
ভাইরাস নিয়ে করোনার রাজ
কেবলই হরণ করছে জীবন
তখন আমরা সাহসী রক্ত
রাখি অস্থি ও মজ্জায়


মানুষ হাসুক
মুহম্মদ নুরুল হুদা

মানুষের মুখ থেকে সরে যাচ্ছে মানুষের মুখ
মানুষের সুখ থেকে সরে যাচ্ছে মানুষের সুখ
মানুষের বুকে-মুখে দয়াহীন মায়াহীন করোনা-অসুখ
মানুষকে ভালোবেসে নাও তুমি মানুষের ঘ্রাণ
অমানুষ ঘৃণা করে, ঘৃণা নয় কোনো পরিত্রাণ
প্রাণে প্রাণ যোগ করো, হে মানুষ, তুমি মহাপ্রাণ
ভালোবেসে খুলে দাও সুখী-দুখী সব মানুষের বুক
ভালোবাসা আলো-ভাষা, ভালোবেসে মানুষ হাসুক


স্বপ্নের ওপারে
শাহরিয়ার সোহেল

সেদিন থেকেই বুকের ভেতর
অশনি বাঁশীর শীতল সুরে
দুরু দুরু কাঁপছে বুক

করোনা ঝড়ে কি উড়েই যাই!

ঝরা পাতার খোঁজ কে রাখে?
নিজেকে সামলাতেই ব্যস্ত পৃথিবী

যদি দেখা আর নাই হয়
ক্ষমা চাই মহান স্রষ্টার কাছে
ক্ষমা চাই সকল মানুষের কাছে
ক্ষমা চাই পৃথিবীর সকল বস্তুকণা থেকে

যদি আর না ফিরি
অভিশাপ দেবেন না প্লিজ
সহজ করে ভুলে যাবেন সব
মনে রাখার প্রয়োজন নেই
কেউ নই আমি, কখনো ছিলাম না

আমার গুচ্ছ গুচ্ছ বইয়ের স্তুপ
ব্যবহৃত কম্পিইটার, এনড্রয়েড মোবাইল
আমার বসার চেয়ার-
যে চেয়ারে বসতেন আমার দাদা
যার সাথে কখনো হয়নি দেখা
প্রিয় আব্বা চলে গেছেন অজানায়
আমিও সে পথের পথিক মাত্র

ফুলের সৌরভ, প্রজাপতির চপলতা, সাগরের ঢেউ
আমের মুকুল, চায়ের সাথে লেবুর পাতা
কেমন স্বপ্নের মতো মনে হয়
দুলছি আমি এক অজানা ঢেউয়ে
এক নিরব স্রোত, এক নিঃশব্দ তরঙ্গ
কোথা থেকে কোথায় ভাসিয়ে নেয়, কেউ জানেনা
ছিলাম হয়ত কোন মায়াময় সভ্যতায়
এখন বহুদূরে, অজানা স্রোতে ভেসে ভেসে
শিহরিত বুকে আরও অধিক দূরে স্বপ্নের ওপারে…


নোবেল করোনা
শাহনাজ পারভীন

নোটিসবিহীন সব কিছুই স্থবির রাত্রির মতো আবাল অন্ধকারে!
গুমড়ে মরে, নিপতিত গভীর ঘুমের মতো অঝোর নিস্তব্ধতার স্বরে!
ইচ্ছা হলো দখল করে নিলো, ক্রীয়নক হেলনে পুরো পৃথিবী প্রাসাদমানুষ বুঝি পাখি!
মারণাস্ত্র মানুষের কাঁধে কাঁধে! অথচ এখন খিল এঁটে বসে আছে রুদ্ধ প্রাসাদ!
ইচ্ছা হলো প্রার্থনালয় ভেঙ্গে দিয়ে উন্মত্ততায় নগ্ন দামামা বাজে! উল্লাসেহুংকারে
সমগ্র বিশ্ব ব্যাপী বিকট ঝাঁকুনিকে পারে? অদৃশ্য জীবানু নাশে? স্যানিটাইজারের ফাঁদে সে হাসে
ভাসে রক্ত স্রোতে, ফুসফুস, ধমনীর কোষে কোষেআসে মরণ দল বেঁধে
চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিলো, বুঝেছেন তো মহাজন! বারে বারে
সেই মুসা নবী, নবী ঈসা, ইউনুস নবীর মাছের পেটে! আদ, সামুদ জাতির অতীত ইতিহাস দেখি,
এখনও ফ্রাউন মমিতে, কঙ্কালে
ভুলে যাই, সেই পারে তুলে নিতে প্রকৃতিতে
বড় প্রতিশোধ বারে বারে!
আমরা সবাই অসহায়এক ফুঁ তে উড়ে যাবো ফুটন্ত তুলোর মতো আকাশে, বাতাশেঅসহায় ঘুরে ঘুরে! প্রকৃতির মাঝে অস্থির দূরে দূরে
তারপরও কত অহংকার,
কত দাপট, কত শক্তির অহমিকা, অথচ ভুলে যাই, কত নশ্বর এই পৃথিবীর ধুলি, অকাতরে ঝরে যাবো
চোখের নিমেষেই লাশ নামে পরিচিত হবো আরবারে
অথচ পরাক্রমশালী শুধু তিনি !
কাবার চার পাশে তাওয়াফহীন পিনপতন নীরবতা, ঝকঝকে প্রান্তর নীরব নিস্তব্ধ কোলাহল নেই কোনখানে, তাওয়াফ বিহীন ক্বাবার এমন ছবি কে দেখেছে কোন কালে!
রাত্রিদিন অসহ্য গরম আর লু হাওয়া মিলিয়ে মিস্ফলা ব্রীজের নীচে মাথা নীচু হাঁটছে না ওমরা'র কাফেলা দলে দলে, তাহাজ্জ্বতের নির্ঘুম রাত্রি নিরুদ্বিগ্ন ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে নির্দ্বিধায় স্বকরুণ হাহাকারে
দেশে দেশে মসজিদ আছে, জুম্মা নেই
মানুষ আবদ্ধ ঘরে ঘরে
ছোঁয়া ছুঁয়ি বন্ধ, মোলাকাত জাদুঘরে!
রাস্তার দুপাশে হাঁকছে না ব্যবসায়ী তাসবীহ দানার মতো বারেবারে,
যা নিবেন তা দু রিয়াল! দু রিয়াল আর! আসুন, আসিবারে!
সিজোনাল সোনার দোকানে রাত দিন ঠিকরে পড়ছে না আলো ঝলমলে জৌলুস!
তাহাজ্জ্বতের মধ্য রাত্রি বড় নিস্তব্ধ মদিনার পথে পথেঝাঁক বেঁধে উড়ে চলা কবুতর ভুলে গেছে পাখা মেলে উড়িবার পথ!
টাইম স্কয়ার এখন শূন্য,
কারফিউ, লকডাউন, আইসোলেশনের
নিদারুণ নিস্তব্ধ হাহাকার করে দিনরাত
লন্ডন ব্রীজে হাঁটছে না মানুষ,
কোলাহলহীন প্রান্তরে খাঁ খাঁ করছে দখিনা হাওয়ার ক্রন্দন অগোচরে
ভেটিক্যানে মনুষ্যবিহীন কবুতর ওড়ে দলে দলে
ভেনিসের জলে ভাসছে না নব দম্পতি আর পর্যটক,
সেখান মায়াহীন কায়া খেলা করে ধীরে ধীরে
সমগ্র ইতালী অবরুদ্ধ আজ,
লাশের বহর কাঁধে কাঁদছে শহর অবিরাম
শূন্য গগনে উড়ছে না প্লেন আর সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকছে না ট্রাক আর ট্রেন
চীনের উহান শহর মুখে মুখে বিশ্বময় ঘোরে
আর তার অধিবাসী অবরুদ্ধ, ক্যাম্পাস, গৃহের অভ্যন্তরেকোভিড 19 মাত্র দুটি শব্দে সারা পৃথিবী কম্পমান থরে থরে
আর বাংলাদেশ? প্রতিদিন যোগ হচ্ছে নোবেল করোনার নাম মৃত্যুর দুয়ারে দুয়ারে
কোয়ারেন্টাইনে হাজার হাজার মানুষ গুমরে কাঁদে
দাপটটা দেখছেন তো!
মহান আল্লাহ্ সব পারেনপারেনিরন্তরেগড়েভাঙ্গেগড়ে
প্রতিশ্রুতিশীল হও নবীন যুবকসন্তান আমার আশায় বাঁধো বুক আরও একবার! মানব সভ্যতা এখন গভীর সংকটেহাত বাড়িয়ে দাও নিরন্তর প্রয়াসেআমরা যদি নাও বাঁচি, আর যদি দেখা নাও হয়; জীবন- যাপন মহাকালে, জানাজা ও দাফনের ছলে
মনে রেখো, পৃথিবী নিশ্চয়ই টিকে যাবে;
আগামী প্রজন্ম ঠিক থেকে যাবেতোমাদের পুনঃপুন আসিবে সময়
এখনও সময় আছে পরিশুদ্ধ হওপৃথিবী!
আমরাই প্রকৃতিকে ক্ষত বিক্ষত করি উল্লাসে!
উন্মত্ত বিলাপে সে কাঁদেআমরা ধারি না ধার,
রোধে, প্রতিরোধেসুরক্ষার বাঁধে
পবিত্রতা ঘোষণা করক্ষমা চাও বারে বারে
কারণ, ইতিহাস আরবারে, ঘুরে ফিরে আসে লোকালয়ে
শিক্ষা দিতে, আসে নিতে


করোনার পয়গাম
বেনজীন খান


কত যে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত কথা আজ মনে জাগছে প্রিয়তমা, কি করে তোমাকে বোঝাবো!
এই জগতের সমস্ত অস্তিত্ব যে তুমি আর আমি, বুঝেছি কি কখনো?
অথচ আজ তাকিয়ে দেখো,
তোমারই দেহ বৃন্দাবনে...
হাত থেকে পা আলাদা, যেমন আঙ্গুল থেকে নখ, মাথা থেকে চোখ, কান থেকে গলা; সবই!
তবে, তুমি কে----প্রিয়তমা!
কেউ-ই না
বলছে, 'নোবেল করোনা'!
সব-ই নাকি পৃথক, মরণঘাতী শত্রু! এমনকি তোমার নিজেরই হাত আজ চরম দুশমন, আপনারই নাক-চোখ-মুখের!
করোনা বলছে, যেওনা; পিতা-মাতা ভাইবোন কারো কাছে! এমনকি ছুঁয়েও দেখোনা--- কলিজার-টুকরার নিথর দেহ!
যেমন বলেছিলে এতকাল, প্রতিবেশী কোন জন? কোন জন, জাতি-সম্প্রদয়-দেশ-মহাদেশ?
প্রিয়তমা আমার!
বড় জঘন্য লাগছে কি করোনা'র পয়গাম?
তা তো মনে হওয়ার কথা নয়!
সভ্যতার নামে এ যাবৎ আমরা পর হয়নি কি একে অন্যের...
মানুষ মানুষের?
পর ভেবেছি----
পরিবেশ প্রতিবেশ জনপদ, সাগর সমুদ্র নদী, সবুজ অরণ্য পাহাড়, জীব অণুজীব পশু কুল, এমনকি আকাশ মহাকাশ মহালোক সব কিছুই!
মর্টারে মর্টারে, পারমাণবিক বোমায়, ক্ষেপনাস্ত্রের পর ক্ষেপনাস্ত্র আঘাতে, কার্বনে কার্বনে ক্ষতবিক্ষত করেছি পর'কে!
প্রিয়তমা আমার!
তবু যদি আজ কুৎসিত লাগে---দেহ বৃন্দাবন বিচ্ছেদ ভাবতবে, প্রায়শ্চিত্ত করোআত্মসমর্পণ করো দ্বৈত ভাব পরিহার পূর্বক অদ্বৈত সমীপে!
ঢালো, অ-নে-ক অ-নে-ক পানি ঢালো; হয়তোবা মিললেও মিলতে পারে করোনা'র করুণা!
কারণ, চোখের নোনা জলে নাকি ভাইরাস মরে!

করোনা
হাসান ওয়াহিদ

তোমার রাষ্ট্র নেই, প্রণীত আইন নেই
অলক্ষ্যে লেখা আছে কেবল ধ্বংস
পৃথিবীর মঞ্চে তুমি জাদুকর অতি দক্ষ
রুমালের কোণে কেউ তোমার নাম লিখে রাখলো
মনে করো তোমার নাম লিখে রাখলো করোনা

কত নামই তো মানুষ লিখে রাখে
আবার ভুলেও যায়
তোমার বিনাশিনী শক্তির কারণে কেউ ভুলবে না তোমায়
আমার মনের মতো নিবিড় নির্জন তুমি নও
তোমার সর্বনাশী দেহে আমাদের মুক্তি কাঁদে অনাদরে অগোছালো দুপুরগুলিতে

করোনা, আর বিস্তার নয়, এবার করুণা করো
আমাদের দ্বিপ্রাহরিক নির্জনকে ফুলেল করে দাও
পাইন গাছের শ্বাসমূল সুন্দরবনে মাটির উপরে  এসে আলো দেখে নতুন পৃথিবীর
আমাদেরও তেমন আনন্দ নিতে দাও


মরণ ঘাতক
মিতা সালেহ উদদীন

দিন ও রাতের রং একইতো আছে
 আমাদের ভোগের পালঙ্ক সরে যাচ্ছে
আকাশ ও চাঁদ একইতো আছে
দুঃশ্চিতাকুটির ঠক ঠক নড়ছে
তোমাদের দেশ আমাদের দেশ
এখন দুদেশে ঘটে না বিদ্বেষ
তবুও সবার চোখেমুখে মৃত্যুসঙ্কা
দেখিনা একটিও বাঁচার রাস্তা
 তুমি আমি আমরা হলাম এককাতারে
দাঁড়াচ্ছি বাঁচার ব্যাকুল লক্ষ্যে
পেছনে -সামনে, ডানে-বায়ে সবখানে
করোনা মরণ ঘাতক আসছে তেড়ে।।



করোনায় করুণ নিঃশ্বাস
সালাম সালেহ উদদীন

 পরাশক্তি পরভব মেনেছে এবার
করোনার কাছে করুণ নিঃশ্বাসে
হুমকি-ধমকি বন্ধ হয়েছে অনেক আগেই
আফগানিস্তান ইরাক সিরিয়া
কতো দেশে কতো জনপদে প্রাণ-হরণ
আঙ্গুলি উঁচু করে নির্দেশ প্রদান
পারমাণবিক অস্ত্রের নগ্ন মহড়া
ক্ষুদ্র ভাইরাস বন্ধ করে ড়িয়েছে সব
এখন প্রাণের মায়ায় বিম্ভ কাঁপে
প্রভূ-ভৃত্য একসঙ্গে বন্দনায় রত ঈশ্বরের
জন্মিলে মরিতে হবে বাঁচে কোন জন
প্রাণি মাত্র-ই মৃত্যুর কাছে বড় অসহায়


করোনা কালের কবিতা 
খসরু পারভেজ
১.
অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ আমাদের
অস্ত্র হাতে একাকী এখন বসে আছি ঘরে
এখন ঘরের ভেতর যুদ্ধ
ঘরে ঘরে যুদ্ধ
একাকিত্ব বড় অস্ত্র আমাদের
এসো অস্ত্র উঁচু করে ধরি
ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তুলি
একা হলে মানুষ নিজেকে চিনতে শেখে
একা হলে মানুষ ভালোবাসতে শেখে মানুষকে
এসো মৃত্যুকে ভয় না করে মানুষকে ভালোবাসি
২.
এত আধিপত্য তোমার
দুনিয়া কাঁপানো আস্ফালন
মূলত তোমার কোনো ক্ষমতাই নেই
নিজের দিকে তাকিয়ে দেখো
কত অসহায় তুমি !
৩.
সমগ্র পৃথিবী এখন একটি মহল্লা
মহল্লা পুড়ছে অদৃশ্য আগুনে
ধর্ম-বর্ণ বিদ্বেষ-বিভেদ ভুলে
মানুষেরা আজ একটি ধর্মেই দীক্ষিত
সে ধর্ম বেঁচে থাকার
দেখো মৃত্যুভয় কতটা মহান !
৪.
মানুষ তুমিই তোমার পাপকে বহন করে চলেছো
তাই তোমাকেই নিতে হবে এর দায়
তুমি কি দেখো না তোমার চেহারা
কত বীভৎস তুমি
কত অকৃতজ্ঞ তুমি!
৫.
"
তুমি ধর্ম বোঝো
মানুষ বোঝো না !"
তোমার ভেতরে যে অন্ধত্ব
তা করোনার চেয়ে ভয়াবহ
৬.
আমি তো অনেক আগেই
হোম কোয়ারেন্টাইনে আছি
আমি তো বিচ্ছিন্ন হয়েই আছি
তোমাদের ভালোবাসা থেকে
তোমাদের মনুষ্যত্বহীনতা
আমাকে দিয়েছে অনন্ত লকডাউন
আজ থেকে আমি আইসোলেসানে যাবো
ভালো থেকো পৃথিবী !


নভেল করোনা
এম এ কাসেম

নভেল করোনা(কোভিড-১৯) চীনের উহানে হয়েছে উৎপত্তি
দেশে-দেশে ছড়াচ্ছে এখন  বিশ্বজুড়ে চলছে যে এক মহা বিপত্তি
লাখে লাখে আক্রান্ত হচ্ছে, চলছে মহামারী
মানুষ মরছে হাজারে হাজার, জনপদে-জনপদে বেড়েছে আহাজারি
করোনা-ভাইরাস দারুণ ছোঁয়াচে দেখা যায় না খালি চোখে
ছোঁয়া লাগলেই আক্রান্ত হবে, না ধুয়ে হাত দেয়া যাবে না চোখে-মুখে
করোনায় আতঙ্কিত হয়ো না, তাই বলে ক'রো না অবহেলা
ডিটার্জেন্ট বা ক্ষারযুক্ত সাবান দিয়ে হাত ধোও পাঁচ বেলা
হাত-মুখ-চোখ ঢেকে চল, 'রো না করমর্দন
কোলা-কুলি বন্ধ রাখ,সালাম বিনিময়ে কর সম্ভাষণ
আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিজ গৃহে করে রাখ বন্দী
চিকিৎসা বা সেবার নামে ভুলেও হওয়া যাবে না তার সঙ্গী
পিতা-মাতা, প্রিয় সন্তান বা হোক সে চিরদিনের সাথী
দু'মিটার দূরে থাকতে হবে, এ যেন এক মহা-শাস্তি
কেউ থাকবে না, করোনার সাথে একাই করতে হবে যুদ্ধ
এ যেন কঠিন কেয়ামতের ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি, হয়ে যাও বিশুদ্ধ
স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত,বাস-ষ্টীমার, ট্রেন-প্লেন, বা সীমান্ত হয়েছে সব বন্ধ
যার যার জন-পদে থাক সবে আজি নিজগৃহে আবদ্ধ
অনুন্নত বলো উন্নত বলো সমস্ত বিশ্ব হয়েছে আজি বন্ধ
বন্ধ হয়েছে দেখ সকল ক্ষমতাধর উদ্ধত্যের সব আস্ফালন, সব দম্ভ
নতজানু আজ সব শাসককুল বিশ্ব মালিকের কাছে
করোনার কি ক্ষমতা আছে তাঁর উপরে উঠে বসে
ক্ষমতা আমার কতটুকু করোনার কাছে গ্রহণ করি সে শিক্ষা
সকল অন্যায়-অবিচার ছেড়ে মহান স্রষ্টার কাছে  কায়মনে করি প্রাণ ভিক্ষা।।



ঝরাও আলোর রবি
শহিদুজ্জামান মিলন

জগত জুড়ে ঘাতক ব্যধি
আজ দিয়েছে হানা
মৃত্যু ভীতি সবার বুকে,
তাই বেঁধেছে দানা 

কারন ছাড়া বন্দী জীবন,
নিয়েছে সব মেনে,
আরো কিছু মানতে রাজি,
শ্বাস যদি পাই প্রাণে

বিশ্বজোড়া দাপট যাদের
তারাও কোনঠাসা 
হর হামেশাই মরছে মানুষ,
রুদ্ধ মুখের ভাষা

আমীর বলো প্রজা বলো
কারো তো নেই ক্ষমা 
সবার হিসাব দিতে হবে
যা রয়েছে  জমা

এমন হলে কেমন হতো?
দুর্নীতিবাজ মুনাফাখোর যারা
ধরতো বেছে তাদের,
তবে শান্তি পেতো ধরা

ক্ষমা কর প্রভু সবার,
ভুল হয়েছে যত,
নতুন রবির আলোর ছটা,
ঝরাও অবিরত



হে! প্রভূ তুমি রক্ষা করো
   
গাজী শহিদুল ইসলাম

আজ কোনো মিছিল হচ্ছেনা,
জনশূন্য রাজপথে
নেই কোনো প্রতিবাদী বলিষ্ঠ স্লোগান,
অথচ বিশ্বজুড়ে লাশের স্তুপ
মৃত্যুর মিছেলে কার কখোন ডাক এসে যায়
এমন আতংকে দিশেহারা হয়ে
নেতা থেকে কর্মী পর্যন্ত সকলেই
নিজ ইচ্ছায় গৃহবন্দি
এই তো সেদিন-
কর্মচারীর স্বজনের অসুস্থতার সংবাদে
টেবিলের উপর ছুটির দরখাস্ত দেখে
বড় সাহেবের সুন্দর মুখখানা
তেঁতুলপাতা পোড়া ছাইয়ের মতো হয়েছিলো
কিন্তু কি আজিব ব্যাপার!
প্রতিষ্ঠানের মালিক নিজেই ঘোষনা করে দিলেন-
আজ থেকে অনিদৃষ্টকালের জন্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
দিন এনে দিন খাওয়া মানুষটির স্ত্রী,সন্তানেরা
লোকটির মুখোমুখি দাড়িয়ে হাত জোড় করে বলছে-
প্রয়োজনে আমরা না খেয়ে থাকবো
তবুও তুমি কাজের সন্ধানে বাহিরে যেওনা!
অথচ সপ্তাহখানেক আগেও এই সন্তানেরাই
দিনমজুর বাবাকে ধমক দিয়ে বলতো-
"
আমরা লেখা পড়া করি, আমাদেরকে মাছ মাংস ছাড়া ভাত দিতে তোমার লজ্জা করেনা?
এই তো সেদিনও পত্রিকার পাতায় দেখেছি
জাত-গোত্র,ধর্ম-বর্ন নিয়ে মানুষে মানুষে
তুমুল দন্দ, জ্বালাও পোড়াও খুন জখমের মহাসমারোহে ভেসেছিলো বিশ্ব
আর আজ! সব ভুলে গেছে নিজেদের জীবন বাঁচানোর তাগিদে
বেশ্যালয়ের দড়জা বন্ধ করে দিয়েছে সর্দারনী
খদ্দেরের কথা ভুলে যেয়ে
পতিতাবৃত্তি করা মানুষগুলোয় বন্ধ ঘরে স্রষ্টাকে রাজি খুশী করতে ধর্মিয় কাজকর্মে
সময় পাড় করছে এখন
কি অদ্ভূত ব্যাপার!
বাজার,দোকান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান
এমন কি হাসপাতালগুলোতেও শুনশান নিরবতা
অফিস আদালতে মানুষের কোনো ভীর নেই
ফুটপাতে থাকা মানুষেরাও ভয়াবহ ভাইরাস "করোনা" থেকে মুক্তি পেতে
বন্দি জীবন যাপনে ব্যস্ত
তারা খুঁজে বেরাচ্ছে লতাপাতায় মোড়ানো
কিংবা পরিত্যক্ত রেলবগির ভীতরে একখন্ড জেলখানা
পাষান নির্দয়া ভাইরাস"করোনা"থেকে রক্ষা পেতে পিতা-মাতা,ভাই-বোন,বন্ধু-স্বজন
যে যার মতো ব্যস্ততায় পাড় করছে প্রতিমূহুর্ত,
সম্ভাবনাময় দেশগুলো থমকে দাড়ালো মাঝপথে
হে! স্রষ্টা দয়াময় -
রক্ষা করো তোমার সৃষ্টিত মানবকুল
জীবননাশক ভাইরাস "করোনার"র ছোবল থেকে


আসবেই শুভদিন
সুমন শিকদার   


এতটুকু আশা দিতে পারি বন্ধু
        আসবেই শুভ দিন
অশুভ করোনা নীরব ঘাতক
        সে যতই বাজাক বীন ।। 

আবার জমবে কোলাহল
        মিলব মিলন মেলায়
সঙ্গনিরোধ, ঘরে বসে থাকা
        নিও আনন্দ চিত্ত দোলায়
এটুকু ত্যাগে বাঁচার আশা, আঁধার হবে লীন ।। 

তুমি না থাকলেও থাকবে এ পথ
থাকবে এ সভ্যতা
তুমি না থাকলেও থাকবে মানুষ
মানুষের জীবন ধারা
আমাদের সচেতনতায় আশা জাগবে বন্ধু আসবেই শুভ দিন ।। 



শুভ কামনা
জাহিদুল যাদু

যদি চুপ করে পড়ে থাকি ঘরটির কোণে 
মুখটিও না দেখায় প্রিয়জনে 
যদি খাওয়া ঘুম হয়ে যায় একান্ত বিষাদ

মুখে যদি কথা না থাকে
হাপরের অনিয়ন্ত্রিত উঠা-নামা 
কষ্ট দিতে থাকে শ্বাস কাজে 
অব্যক্ত সব কথা আর 
অসম্পূর্ণ বিস্তর পার্থিব কাজ 
যদি আর না ডাকে ব্যাকুল কলেবর 

যদি সব কিছু লাগে ব্যর্থ ভীষণ 
জীবনেরই না থাকে কোন লক্ষ্য-সমীকরণ
নিজেকেই যদি মনে হতে থাকে বোঝা
অচ্ছুৎ-অপ্রয়োজনীয় এক প্রাণ

তখনও মানুষের চোখে থাকে আলো 
থাকে বাঁচবার আকূতি শতভাগ 
পৃথিবীও যদি না দেয় সায় 
তবুও মরবার আগে 
প্রজন্মের ভালো মানুষমাত্রই চায় 



শুধু বিজ্ঞানসন্তানেরা
দীপংকর দাস রতন

ভোরবেলায় দুপুরের বিষণ্ণতা
উঠতেই ইচ্ছে করেনা

টেলিভিশন এখন ইটভাটার
জ্বালামুখ
লাল আগুন আর ধোঁয়া

লোলজিহ্বা ড্রাগন 
ধ্বংসযজ্ঞে মেতে উঠেছে
উন্মত্ত অাক্রোশে
উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম
পুড়ছে ধিকি ধিকি

'বইভর্তি ব্যাগ পিঠে ঝোলান 
শিশুদের হাতধরে মায়েরা
যায় বিদ্যালয়ে'
এমন পবিত্র ছবি অনুপস্থিত
সর্বত্র 

অস্পষ্ট হয়ে অাসে ধর্মেরঢাক
চিৎকারসর্বস্ব স্বর্গপুত্ররা
নিষ্কল চেষ্টায় ক্লান্ত

সাইরেন বাজিয়ে ঘোরা কর্তাগণ
প্রায় অন্তরিণ 

শুধু বিজ্ঞানসন্তানেরা বিনিদ্রসময়
কাটায় গবেষণাগারেভাবে,
সাতশত কোটি 'অমৃতস্য পুত্রাঃ' বিপন্ন 
অন্তরাত্মার আহ্বানে
যুদ্ধ করে চলে নিরলস


কোয়ারান্টাইন দিন কাটায়
এবিএম সোহেল রশিদ

.
সখী, তোমার চাইতে এখন এক বোতল সেনিটাইজার বেশী প্রিয়
জেনে নিও, তোমার লোলুপ ওষ্ঠের চেয়ে কিম্ভুত মাস্কই বেশী কাম্য
সব প্রেম এখন, তিন হাত দূরত্বে, মরীচিকার মতো মিলিয়ে যায়
করোনাময় জীবন, করুণা পেতে কোয়ারান্টাইন দিন কাটায়
.
সরকারি ভাষ্য এখনও তিনের নামতায় খাচ্ছে ঘুরপাক
ফাকা বুলিতে ভীত চিকিৎসকরা হবে জমদূতের খোঁড়াক?
শুভঙ্করের ফাঁকি এখন মজ্জাগত অসুখ
শুনছি যা, তাতে লজ্জায় ডুবে যায় মুখ
.
কষ্টগুলো কাঁচ-ঘেরা আইসিইউতে বন্দী
সম্পর্কগুলো নিয়ম ভেঙে করোনার প্রতিদ্বন্দ্বী
.
অনুজীবের বিরুদ্ধে ঢাল- তলোয়ার ছাড়া যুদ্ধ
জীবন নামের পাখি সংক্রমণের কাছে অবরুদ্ধ
আলাদিনের প্রদীপের আশায় আর বসে না থেকে
এসো, একাত্তরের মতো আবার সবাই, ওঠি জেগে
.
মানুষের জন্য মানুষ, অন্যকিছু নয়
এই হোক আমাদের একমাত্র প্রত্যয়



অস্থির 
এম.এন.এস তুর্কী 

অস্থির, অস্থির, অস্থির! 
সবার চোখে এখন মৃত্যু দাপটের তুমুল মহাঅস্থির
কোথায় গেলে পাওয়া যাবে বেঁচে থাকার 
দু' দণ্ড আশা 
আমি যাচ্ছি না, থাকছি পৃথিবীতে আরোও
কিছুটা সময়,মাস,বছর 
আরোও আঁকবো অনেক স্বপ্ন-ভালোবাসার
বিশাল নীড়;
তৈরি করবো দুর্দান্ত সব চেতনাবোধের 
শক্ত অবয়ব
পাবো শিকল ভাঙ্গার স্বীকৃতির উন্নত জীবনের ডাক টিকিট 
কিন্তু সব স্বপ্ন আজ পুটলি বেঁধে দৌঁড়িয়ে বেড়াচ্ছে, দেশ হতে মহাদেশের
নিশ্চিতার অভয় অরণ্যে 
যদি পাই একটু বেঁচে থাকার আশ্রয়!
কে দেবে প্রণোদনা জীবনকে, লম্বা করার আরোও দীর্ঘ  ছায়াপথের সন্ধান  
কে দেবে শীতল কোলে মাথা রেখে একটু ঘুমাবার উষ্ণ আদর
সব অনুভূতির জানালায় হানা দিয়েছে ক্ষুধার্ত পঙ্গপাল; ঠেকানোর কেউ নেই 
কি একটা মহা শ্লোগান পৃথিবীময়! 
ভাইরাস, ভাইরাস, "করোনা ভাইরাস" 
সবকিছু আজ থমকে দিয়েছে এ জৈবিক মারণাস্ত্রের কাছে!  
চারিদিকে দেখি সংকোচিত হচ্ছে মানুষের 
চাওয়া-পাওয়ার লোলুপ দৃষ্টিগুলির পরিধি
একি দেখছি আমি! 
যে পৃথিবী তার স্বার্থের জন্য কতো রক্তের
বন্ধনকে না অস্বীকার করেছে, তা আমার জানা নেই 
তবে আজ কেন তার শামুকের মতো নিজেকে 
গুটিয়ে নেওয়া 
সমাজ, রাজনীতি, ধর্ম কেন তাদের পরিমাপের জ্যামিতিক ব্যাসার্ধকে 
ডিঙিয়ে খোলা মাঠে এসে জিহ্বা বের করে হাপায়
বুঝি না প্রভু আজ কেন সত্য মিথ্যার কাছে, আর মিথ্যা সত্যর কাছে বৈরাগী হয়ে পথে পথে ঘোরে 
হে মানুষ! তুমি তো অসহায় ছিলে না, অক্ষম করেছো নিজে নিজেকে, প্রকৃতি নয়
তুমি করেছো, প্রকৃতির ওপর যা ইচ্ছে তাই ব্যবহার
তাই, আজ সে খড়গ হাতে রুদ্র মূর্তিমান!

আমি জানি না এর শেষ কোথায়, কখন হবে প্রকৃতি শান্ত
দিবে আবার বেঁচে থাকার সুদূর মাইলফলকের উন্নত দিকপালের নির্দেশ 
শুধু চেয়ে আছি প্রভু তোমার দিকে
ক্ষমা দাও,ক্ষমা দাও প্রভু!
উজাড় করে দাও সব তোমার ক্ষমা
আমরা সবাই তাকিয়ে আছি যে, পাবো তোমার বিপুল ক্ষমা।। 


করোনা'ম্লান বসন্ত
          রাজ পথিক


বসন্তের বাতাস আজ থেমে গ্যাছে,
ফিকে বরণ নিয়েছে গৈরিক পলাশ
শাখে-শাখে লাল টুকটুকে কৃষ্ণচূড়া রাজি  
কেমন য্যানো ফ্যাকাসে রং করছে ধারণ


অদৃশ্য মরণ শংকা ভেসে বেড়াচ্ছে বাতাসে,
ঘোলা মেঘে পূঞ্জিভূত চৈত্রের আকাশ
তবুও চাইছি না এক পশলা বৃষ্টি,
উপরন্তু অধিক উষ্ণতাকেই করছি আহবান
মনপুড়া উত্তাপের কাছে নিতান্তই পরাজিত চৈত্রখরোত্তাপ


হৃদপল্লী'র অরণ্যে কুহুতানে জাগছে না....
প্রিয় সান্নিধ্যের অমোঘ সুখের সাধ
বেনারসি ঘোমটায় শিমুল আর আন্দোলিত করছে না কবির কল্পবিলাসি প্রাণ
স্বজন বিয়োগের পূর্বাতঙ্কে…..  
চারিদিকে গুমোট নৈঃশব্দ্যের বিষাদ
বেঁচে থেকেও প্রতিনিয়ত নিতে হচ্ছে,
………….অপ্রত্যাশিত মৃত্যুর স্বাদ


জনমনে এ্যাকেতো করোনা ভিতি…..
মরার উপর খারার ঘা মারছে, নিত্যপণ্যের উর্দ্ধগতি
ঝোপ বুঝে মারছে কোপ রাঘবদল পুঁজিবাদী
অদৃশ্য করোনা ঘাতক, বসন্তটাকেই করলো মাটি




বড্ডো ভয়ে আছি
মুস্তাফিজুর রহমান মুস্তাক


বড্ডো ভয়ে আছি সবাই
কি জানি কি হয়
করনাতে কাঁপছে এখন
পুরা জগতময়
এমনিতে ভাই মশার ভয়ে
কাঁপে সদাই বুক
এখন আবার করনাতে
কাড়লো তাবত সুখ
লক্ষ মানুষ ফিরলো দেশে
কেউ পেলোনা টের
কঠিণ বিপদ আসলো নিয়ে
হয়তো আমাদের
প্রথমে জ্বর গলা ব্যাথা
সঙ্গে হাঁচি কাশ
মাথা ব্যাথা থাকলে সাথে
মহা সর্বনাশ
চৌদ্দ দিনের আগে নাকি
যায়না কিছু বোঝা
প্রতিরোধের নিয়মগুলো
তাইতো এখন খোঁজা
পরিচ্ছন্ন থাকবো সদাই
মাক্স রাখবো পরে
সাবান দিয়ে হস্ত ধোয়া
কুড়ি সেকেন্ড ধরে
নেই প্রতিকার এ ভাইরাসের
বিশ্বে কোনো দেশে
শত রকম চরিত্র তার
থাকে নানান বেশে
চিকিৎসাতে তুঙ্গে যারা
তারাও আজি ফেল
তবু মোদের হচ্ছেনা হুশ
এমন বে- আক্কেল
নিষেধ আছে জটলা করা
কিংবা সমাবেশ
এসব কিছুই মানছে নাতো
কাঠ মোল্লার দেশ
দিচ্ছে কষে তাবিচ কবচ
এমনই নির্বোধ
জানেইনাসে প্রকৃতি আজ
নিচ্ছে কোনো শোধ
তাইতো এখন সতর্কতা
ছাড়া উপায় নাই
প্রতিরোধের উপায় জেনে
মোকাবেলায় যাই।।

মহামারী
মারিয়া নূর

মহামারীর এই মহাতাণ্ডবও একদিন
নির্ধারিত সময় মাড়িয়ে ঠিক পেরিয়ে যাবে
শুধু থেকে যাবে কিছু বাক্সবন্দী দীর্ঘশ্বাস
জীবনকে জীবনের দামে কিনেছে
কতো সহস্র জীবন; হাসি মুখে,পরম উচ্ছ্বাসে
তার সাক্ষ্য দেবে সময়
ঠিক যেমন করে একটা একাত্তর হয়েছিল,
হয়ে আছে, রোমাঞ্চকর মুখরোচক গল্প
দু'শ বছরের দাশত্বটাও সাদাকালো সিনেমায়
কুঁজো হয়ে হাটে
বরং শিশুতোষ মস্তিষ্কে খুঁটি গেড়েছে
সাত ভাই চম্পা, কমলার বনবাস, কিরণমালা
আরও রকমারি শিরোনামের জলছবি
পূর্বসূরীদের হৃৎপিণ্ড নিংড়ানো রক্তস্রোত
কিঞ্চিতও কি কলিজায় কম্পণ জাগায়;
যতটা হিন্দি সিনেমায় নায়িকার গুলিবিদ্ধ শরীর তড়পাতে দেখে জাগে?
রক্তের হাতে রক্তের রক্ত,
সম্পর্কের সাথে সম্পর্কের বিরোধ
"
আমার আমার" শব্দদের বিদঘুটে তাণ্ডবে
"
আমাদের" শব্দরা বিলুপ্তই বলা চলে
"প্রতিদান" এতো এখন কেবলই এক আক্ষরিক চিত্র;
প্রেমের পেয়ালায় গরল ঢালতে পারাটাকেই
বুদ্ধিমত্বার আখ্যা দেওয়া হয় ঢাকঢোল পিটিয়ে
যে যতটা বেশি অরাজকতা ছড়াতে পারে
তার মাথার মুকুটে ততটাই স্বর্ণখচিত কারুকাজ
আঠেরো থেকে বাইশ ক্যারেটের ব্যাবধান
এই প্রেক্ষাপটে অনেক, অনেক বেশি
প্রতিযোগিতাগুলোও
তাই মহামারী আকার নিয়েছে সেই কবেই!
ভুলে গেছি ধর্ম, মরে গেছে বিবেক,
মানবতারও, সেই নির্মম প্রতিবন্ধি জীবন
মানুষ আর মনুষত্ব
এদুইয়ের সংযোগ বিচ্ছিন্ন যেনো কতকাল!
প্রবচনের বাচনভঙ্গিতেও
দেখি চোখেদের কী ভীষণ বিদ্রুপে দৃষ্টি
কলমের রক্তবমিতে নষ্ট যখন কবিতার খাতা;
তখন স্বরলিপিদের মিথ্যে প্রবোধ দিয়ে কী লাভ?
অন্তত ওদের সম্মুখে নিজেদের চরিত্রগুলো
উন্মোচিত থাক?
কোনও প্রকার ইতস্ততা ছাড়াই ওরা যেনো
মিথ্যে মুখশের সত্যিটা তুলে আনতে পারে
কলঙ্কিত ইতিহাসের, পরের অধ্যায়ে
ওরা জানুক, ওরা শিখুক,
দক্ষ হয়ে উঠুক, আমাদের অনাগত প্রজন্ম;
উন্নত থেকে উন্নততর বিশ্ব গঠণে


অদৃশ্য করোনা
মাহবুব খান
এভাবেই তো যূগে যুগে
তুমি সৃষ্টি আর ধংসের মহীয়ান অধিকর্তা!
চূড়ান্ত ধংসের পরে
আবার কোনো নতুন সৃষ্টির মহান উল্লাসে
অন্য কোনো পাক মহাগ্রন্থে
স্বভাবসুলভ ভাবে হয়তো আবার বলবে-
তোমরা জানো না
তোমাদের জানানো হয়েছে তাই জেনেছো
আদ আর সামুদ জাতির মতো
পৃথিবী নামক গ্রহের মানুষ জাতিকে
আমি বিনাশ করেছি করোনা মহামারি দিয়ে!
তাদের কিছুই করার ছিল না
শুধু অসহায়ের হয়ে মৃত্যুকে আলিংগন করা ছাড়া
তোমাদের কী হয়েছে?
তোমরা তার থেকেও শিক্ষা নাও না?
তারা জ্ঞান বিজ্ঞানে তোমাদের থেকেও উন্নত ছিল
মানুষ আমার আদেশ মানেনি তারা ছিল সীমালংঘনকারী
তাই তাদের জন্য পাঠিয়েছিলাম অদৃশ্য করোনা
আমি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান
আমি এক অদ্বিতীয়

করোনা
শরিফুল আলম

করোনা এসেছে দেশে
ডেঙ্গু যাওয়ার শেষে
জানি না এর পরে কপাল
কোন ধরনায় মেশে
প্লেগ ইবোলা যাহা করেছে
ডেঙ্গু করেছে বেশি
করোনা এসে দেখাল তাহার
ক্ষমতা রাশি রাশি
পৃথিবীর মানুষ কতবড় নেতা
কতবড় তার জ্ঞানের বহর
হাটু পানিতে ডুবদিয়ে যদি
মনে ভাবি মহা নহর
দুরে বসে কেহ মুচকি হাসে
সে কি কাহারো জানা?
জানে জনে জনে
তবু কেন যেন স্বিকার করতে মানা
মাঝে মাঝে কিছু শিরোনাম মনে
তুলে দেয় বড় জ্বালা
মন চায় সব এক ঘরে করে
বাহিরে ঝুলই তালা
নামাজের ঘরে মোম বাতি মানে
দরগায় মানে দান,
হামাগুড়ি দিয়ে তাহারে খুজি
যাই যাক তবে প্রাণ


করোনার কাল 
তৃষা চামেলি

সময় এখন নিষিদ্ধ, বেপরোয়া, অসহায়
আসলেই কি ঠুনকো পৃথিবীর আয়ুষ্কাল!
যেমন ঠুনকো দম্ভ, গৌরব, প্রতিপত্তি
প্রতারণা, প্রবঞ্চনা, জালিয়াতির হাত!
নিজেদের বোকামি দেখে নিজেরাই
হেসে উঠি খিলখিল
আহারে পরাক্রমশালী জীবন!
কালে কালে পরাক্রান্ত অতি ক্ষুদ্র অণুজীবের কাছে
এভাবেই সভ্যতা হেরে যায়
ভেঙে দেয় যাপিত জীবন কালের করোনা
যদি বলো সবই মিথ্যে, মেকী, বৃথা
আমি বলি কিছুই মিথ্যে নয়,
তবে হতে পারে এ এক মায়াজাল
স্বপ্নঘোর খেলা
আমরা কি সবাই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবো
ঘাতক করোনার হাতে
হয়তো তা কোনদিন নয়
মানুষ ইতিহাস হয়ে যায়
বিলুপ্ত হয়না তবু ডাইনোসরের মতো
ডরেনা ইবোলা, ডেঙ্গু, সোয়াইন ফ্লু কিংবা করোনাতে
ক্ষুদ্র এ জীবন, হয়তো হেরে যাবো আমি
থাকবে তুমিএবং তোমরা
তোমাদের অনাগত স্বাপ্নিক জাতক
আমি চলে গেলেও হবেনা অস্তিত্বহীন
অনবদ্য আমাদের গৌরবগাথা
এই যে সূর্যদিন, মুখরিত কবিতাগ্রাম,
পায়েচলা মেঠোপথের মায়া
নদীতীরে দুলে ওঠা শুভ্র কাশবন
মৌ মৌ গন্ধে ভেজা বসন্ত বাগান
নিসর্গের মহিমায় সাজানো পৃথিবীর রঙিন গালিচা
মেকী সভ্যতায় ঝলসানো আলোর শহর
সবই রেখে যাব তোমাদের জন্য
বলে যাই তবে, এ ঠোঁটে আঁকিনি কখনো পাপের চুম্বন
অথবা মাখিনি গায়ে ভেজাল সুগন্ধি কখনো
কী আর রেখে যাব বলো!
একান্তই সাদামাটা কবিতার খাতা,
আভিজাত্যহীন নিরালঙ্কার বেশ ও বিভূতি
তবু তা বড্ড আপনার, ঠিক বয়ে যাওয়া
করুণ কপোতাক্ষের মতন
এই নাও, সংক্রমিত এ সংসারের সোনার চাবি
নোনা ঘামে অর্জিত আদিম মাটির মোহর,
আগলে রাখা হাজার বছরের নথি
অমূল্য দলিল -দস্তাবেজ যতো
তবু হে প্রিয়জন, ছুঁয়ো না আমায় !
শুধু মনে রেখো, পৃথিবীর এই ঘাসের গালিচায়
একদিন আমিও হেঁটেছিলাম তোমাদের সাথে

সঙ্গনিরোধেই ভালোবাসা
ফরিদা ইয়াসমিন সুমি

টিকে থাকার কঠিনতম লড়াইয়ে যখন ব্যস্ততম এই পৃথিবী,
আমার দেশের রাজনগরে তখন এক পশলা বৃষ্টি নামে
পাথরচাপা মলিন ঘাসেরা ফিরে পেতে চায় সতেজ প্রাণ
চৈত্রের ফুলেরা দিকবিদিক ছোটায় সুতীব্র সুঘ্রাণ
বৈরী নগরীর প্রকৃতিতে বাজে কিশোরীপায়ের সুরেলা ছন্দ
যৌবনের উদ্দামতায় মত্ত অস্থির আকুল হাতছানি
এ নগরী জেনেছে পরাজিত হতে নেই
এ নগরী জেনেছে ঘৃণাবাষ্প ছড়াতে নেই
সঙ্গনিরোধেই রেখেছি জমা সমস্ত ভালোবাসা
দূরত্বে বেড়েছে সকল অনায়াস গভীরতা
আমরা জেনেছি, কঠিনতা ধুয়েমুছে যায়
বৈরীতা মুখথুবড়ে পড়ে গন্তব্য হারায়
প্রকৃতির মতো আমাদের ভালোবাসাও জেনেছে
চৈত্রের ফোঁটাতে চিরবসন্ত ঝরে
বৃষ্টির ফোঁটাতে ভালোবাসা ঝরে
টুপটাপ
টুপটাপ
টুপটাপ
টুপটাপ
কার্নিশে
প্রাঙ্গণে
সময়ের কাঁটায়
আলিঙ্গনে

করনা ভাইরাস বনাম প্রেম
হুমায়ূন কবীর

ওরে তাড়ির কলস দেখনায় মাতাল করস
আচুল করি পান পৌরুষের ধরি গান
ভেসে যায় মহামারি ওযুত নিযুত আহাজারি
একটু নির্জনতা একটু সময় পাওয়া
একটু যদি লাগে ছোয়া
ছোটে ফেরারি হাওয়া
তুমুল বাজায় তোকে
শক্তির সমস্ত সীল বর্ডার গুড়ো তুষকরে
গুড়ো গুড়ো হতে এতো তোর মজা লাগে?
সাড়ে সাতশো কোটি লোক করনা
আতংকে যখন গিলতে ভুলেগেছে ঢোক,
সন্ধ্যা কবরের গন্ধ নিয়ে আসে,
তখনো গভীর রাতে আকাশে এক রূপলীন চাঁদ ওঠে
বাসন্তি কিশলয় হাসে,
গোলাপ গন্ধ খসায়ে চলে গেছে গোপন ডেটিংএ

1 টি মন্তব্য:

  1. অসাধারণ উদ্যোগ। করোনা ভাইরাস রোগ কোভিড-১৯ নিয়ে এই সাহিত্য আয়োজনে মুগ্ধতা প্রকাশ করছি।পত্রিকার সাফল্য কামনা রইলো।
    আমরা বেঁচে থাকবো এই পৃথিবীকে অনেক কিছুই দিতে বাকি আমাদের।শুভ কামনা বাংলাদেশ।

    উত্তরমুছুন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.